হযরত আদম (আলাইহিস সালাম{৯}

 হযরত আদম (আলাইহিস সালাম


লাগল। এক পর্যায়ে সে বলল, ‘আল্লাহ যে তোমাদেরকে ঐ গাছটির নিকটে যেতে নিষেধ করেছেন, তার কারণ হ’ল এই যে, তোমরা তাহ’লে ফেরেশতা হয়ে যাবে কিংবা তোমরা এখানে চিরস্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যাবে’ (আ‘রাফ ৭/২০)। সে অতঃপর কসম খেয়ে বলল যে, আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাংখী’ (ঐ, ২১)। ‘এভাবেই সে আদম (আঃ) ও হাওয়াকে সম্মত করে ফেলল এবং তার প্রতারণার জালে আটকে গিয়ে তারা উক্ত নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল আস্বাদন করল। ফলে সাথে সাথে তাদের গুপ্তাঙ্গ প্রকাশিত হয়ে পড়ল এবং তারা তড়িঘড়ি গাছের পাতা সমূহ দিয়ে তা ঢাকতে লাগল। আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? (ঐ, ২২) তখন তারা অনুতপ্ত হ’য়ে বলল, قَالاَ رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ- ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের উপর যুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’ (২৩)। ‘আল্লাহ তখন বললেন, তোমরা (জান্নাত থেকে) নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। তোমাদের অবস্থান হবে পৃথিবীতে এবং সেখানেই তোমরা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সম্পদরাজি ভোগ করবে’ (২৪)। তিনি আরও বললেন যে, ‘তোমরা পৃথিবীতেই জীবনযাপন করবে, সেখানেই মৃত্যুবরণ করবে এবং সেখান থেকেই তোমরা পুনরুত্থিত হবে’ (আ‘রাফ ৭/২০-২৫)।


এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ইবলীসের কথায় সর্বপ্রথম হাওয়া প্রতারিত হন। অতঃপর তার মাধ্যমে আদম (আঃ) প্রতারিত হন বলে যে কথা চালু আছে কুরআনে এর কোন সমর্থন নেই। ছহীহ হাদীছেও স্পষ্ট কিছু নেই। এ বিষয়ে তাফসীরে ইবনু জারীরে ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে যে বর্ণনা এসেছে, তা যঈফ।[14] দ্বিতীয়তঃ জান্নাত থেকে অবতরণের নির্দেশ তাদের অপরাধের শাস্তি স্বরূপ ছিলনা। কেননা এটা ছিল তওবা কবুলের পরের ঘটনা। অতএব এটা ছিল হয়তবা তাকে শিষ্টাচার শিক্ষা দানের জন্য। বরং সঠিক কথা এই যে, এটা ছিল আল্লাহর পূর্ব নির্ধারিত ও দূরদর্শী পরিকল্পনারই অংশ। কেননা জান্নাত হ’ল কর্মফল লাভের স্থান, কর্মের স্থান নয়। তাছাড়া জান্নাতে মানুষের বংশ বৃদ্ধির সুযোগ নেই। এজন্য দুনিয়ায় নামিয়ে দেওয়া যরূরী ছিল।


প্রথম বার আদেশ দানের পরে পুনরায় স্নেহ ও অনুগ্রহ মিশ্রিত আদেশ দিয়ে বললেন, ‘তোমরা সবাই নেমে যাও’। অতঃপর পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা হওয়ার (বাক্বারাহ ২/৩০; ফাত্বির ৩৫/৩৯) মহান মর্যাদা প্রদান করে বললেন, ‘তোমাদের নিকটে আমার পক্ষ থেকে হেদায়াত অবতীর্ণ হবে। যারা তার অনুসরণ করবে, তাদের জন্য কোন ভয় বা চিন্তার কারণ থাকবে না। কিন্তু যারা তা প্রত্যাখ্যান করবে ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী এবং সেখানে তারা অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে’ (বাক্বারাহ ২/৩৮-৩৯)।


উল্লেখ্য যে, নবীগণ ছিলেন নিষ্পাপ এবং হযরত আদম (আঃ) ছিলেন নিঃসন্দেহে নিষ্পাপ। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ভুল করেননি। বরং শয়তানের প্ররোচনায় প্রতারিত হয়ে তিনি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ বৃক্ষের নিকটবর্তী হওয়ার নিষেধাজ্ঞার কথাটি ভুলে গিয়েছিলেন। যেমন অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا- ‘অতঃপর আদম (আঃ) ভুলে গেল এবং আমি তার মধ্যে (সংকল্পের) দৃঢ়তা পাইনি’ (ত্বোয়াহা ২০/১১৫)। তাছাড়া উক্ত ঘটনার সময় তিনি নবী হননি বরং পদস্খলনের ঘটনার পরে আল্লাহ তাকে নবী মনোনীত করে দুনিয়ায় পাঠান ও হেদায়াত প্রদান করেন’ (আ‘রাফ ৭/১২২)।


এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ইবলীসের ক্ষেত্রে আল্লাহ বললেন, قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ- ‘তুমি জান্নাত থেকে বেরিয়ে যাও। নিশ্চয়ই তুমি অভিশপ্ত’ (হিজর ১৫/৩৪; আ‘রাফ ৭/১৮)। অন্যদিকে আদম (আঃ) ও হাওয়ার ক্ষেত্রে বললেন, قُلْنَا اهْبِطُواْ مِنْهَا- ‘ তোমরা নেমে যাও’ (বাক্বারাহ ২/৩৬, ৩৮; আ‘রাফ ৭/২৪)। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইবলীস কখনোই আর জান্নাতে ফিরে আসতে পারবে না। কিন্তু বনু আদম (আঃ)ের ঈমানদারগণ পুনরায় ফিরে আসতে পারবে ইনশাআল্লাহ।


নগ্নতা শয়তানের প্রথম কাজ :


মানুষের উপরে শয়তানের প্রথম হামলা ছিল তার দেহ থেকে কাপড় খসিয়ে তাকে উলঙ্গ করে দেওয়া। আজও পৃথিবীতে শয়তানের পদাংক অনুসারী ও ইবলীসের শিখন্ডীদের প্রথম কাজ হ’ল তথাকথিত ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতার নামে নারীকে উলঙ্গ করে ঘরের বাইরে আনা ও তার সৌন্দর্য উপভোগ করা। অথচ পৃথিবীর বিগত সভ্যতাগুলি ধ্বংস হয়েছে মূলতঃ নারী ও মদের সহজলভ্যতার কারণেই। অতএব সভ্য-ভদ্র ও আল্লাহভীরু বান্দাদের নিকটে ঈমানের পর সর্বপ্রথম ফরয হ’ল স্ব স্ব লজ্জাস্থান আবৃত রাখা ও ইযযত-আবরূর হেফাযত করা। অন্যান্য ফরয সবই এর পরে। নারীর পর্দা কেবল পোষাকে হবে না, বরং তা হবে তার ভিতরে, তার কথা-বার্তায়, আচার-আচরণে ও চাল-চলনে সর্ব বিষয়ে। পরনারীর প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি ও মিষ্ট কণ্ঠস্বর পরপুরুষের হৃদয়ে অন্যায় প্রভাব বিস্তার করে। অতএব লজ্জাশীলতাই মুমিন নর-নারীর অঙ্গভূষণ ও পারস্পরিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি। নারী ও পুরুষ প্রত্যেকে একে অপরের থেকে স্ব স্ব দৃষ্টিকে অবনত

‘প্রত্যেক মানবশিশুই ফিৎরাতের উপরে জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী-নাছারা বা মজূসী (অগ্নিউপাসক) বানায়’।[21] এখানে ‘ফিৎরাত’ অর্থ স্বভাবধর্ম ইসলাম।[22] অর্থাৎ মানব শিশু কোন শিরকী ও কুফরী চেতনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। বরং আল্লাহকে চেনা ও তার প্রতি আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের চেতনা ও যোগ্যতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এর ফলে নবীদের প্রদত্ত তাওহীদের শিক্ষাকে সে অত্যন্ত সহজে ও সাগ্রহে বরণ করে নেয়। কেননা শুধু জন্মগত চেতনার কারণেই কেউ মুসলমান হ’তে পারে না। যতক্ষণ না সে নবীর মাধ্যমে প্রেরিত দ্বীন সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় কবুল করে।


ছহীহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে, وَإِنِّىْ خَلَقْتُ عِبَادِيْ حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ وَأَنَّهُمْ أَتَتْهُمْ الشَّيَاطِيْنُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِيْنِهِمْ... ‘আল্লাহ বলেছেন, যে আমি আমার বান্দাদের ‘হানীফ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ’ রূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর শয়তান তার পিছে লেগে তাকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে নিয়ে গেছে।[23] আল্লাহ বলেন, فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ‘আল্লাহর ফিৎরত, যার উপরে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর এই সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই’ (রূম ৩০/৩০)।


মোট কথা প্রত্যেক মানবশিশু স্বভাবধর্ম ইসলামের উপরে জন্মগ্রহণ করে এবং নিজ সৃষ্টিকর্তাকে চেনার ও তাকে মেনে চলার অনুভূতি ও যোগ্যতা নিয়ে সৃষ্টি হয়। যদিও পিতা-মাতা ও পরিবেশের কারণে কিংবা শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পরবর্তীতে অনেকে বিভ্রান্ত হয়। অতএব কাফির-মুমিন-মুশরিক সবার মধ্যে আল্লাহকে চেনার ও তাঁর ইবাদত ও আনুগত্যের চেতনা ও যোগ্যতা বিদ্যমান রয়েছে। এই সৃষ্টিগত চেতনা ও অনুভূতিকে কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। অর্থাৎ কুশিক্ষা, কুসঙ্গ ও শয়তানী সাহিত্য পাঠ করে বা নষ্ট ব্লু ফিল্মের নীল দংশনে উক্ত চেতনাকে পরিবর্তনের চেষ্টা করা আল্লাহর সৃষ্টির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার শামিল। অতএব উক্ত সৃষ্টিগত চেতনাকে সমুন্নত রাখাই ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য।


একথা ব্যক্ত করে আল্লাহ বলেন, وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنِ- ‘আমি জিন ও ইনসানকে আমার ইবাদত ব্যতীত অন্য কোন কাজের জন্য সৃষ্টি করিনি’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)। অর্থাৎ আমি তার প্রকৃতিতে আমার প্রতি ইবাদত ও দাসত্বের আগ্রহ ও যোগ্যতা সৃষ্টি করে দিয়েছি। এটাকে সঠিক অর্থে কাজে লাগালে আমার অবাধ্যতামূলক কোন কাজ বান্দার দ্বারা সংঘটিত হবে না এবং জগতসংসারেও কোন অশান্তি ঘটবে না। যেমনভাবে কোন মুসলিম শিশু জন্মগ্রহণের সাথে সাথে তার কানে আযান শোনানো হয়।[24] অথচ ঐ শিশু আযানের মর্ম বুঝে না বা বড় হয়েও তার সেকথা মনে থাকে না। অথচ ঐ আযানের মাধ্যমে তার হৃদয়ে প্রোথিত হয়ে যায় তাওহীদ, রিসালাত ও ইবাদতের বীজ। যার প্রভাব সে আজীবন অনুভব করে। সে বে-আমল হ’লেও ‘ইসলাম’-এর গন্ডী থেকে খারিজ হয়ে যেতে তার অন্তর কখনোই সায় দেয় না। তার অবচেতন মনে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি আনুগত্য বোধ অক্ষুণ্ণ থাকে। বিশেষ করে হতাশা ও বিপন্ন অবস্থায় সে তার প্রভুর সাহায্য ও সান্নিধ্য লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।


অর্থ না বুঝলেও কুরআন পাঠ ও আযানের ধ্বনি মানুষের মনকে যেভাবে আকৃষ্ট করে এবং হৃদয়ে যে স্থায়ী প্রভাব ফেলে তার কোন তুলনা নেই। একারণেই কাফির আরব নেতারা মানুষকে কুরআন শুনতে দিত না। অথচ নিজেরা রাতের অন্ধকারে তা গোপনে আড়ি পেতে শুনত এবং একে জাদু বলত। শ্রেষ্ঠ আরব কবিগণ কুরআনের অলৌকিকত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এমনকি অন্যতম শ্রেষ্ঠ আরবী কবি লাবীদ বিন রাবী‘আহ কুরআন শোনার পর কাব্যচর্চা পরিত্যাগ করেন। গত শতাব্দীর শুরুতে তুরষ্কে ওছমানীয় খেলাফত উৎখাত করে কামাল পাশা ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করেন এবং মসজিদ সমূহে আরবী আযান বন্ধ করে তুর্কী ভাষায় আযান দেওয়ার নির্দেশ জারি করেন। কিন্তু তাতে আরবী আযানের প্রতি মানুষের হৃদয়াবেগ আরও বৃদ্ধি পায়। ফলে গণবিদ্রোহ দেখা দিলে তিনি উক্ত আদেশ বাতিল করতে বাধ্য হন।


আধুনিক বিজ্ঞানও প্রমাণ করে দিয়েছে যে, শব্দ মানব মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তাই আল্লাহ প্রেরিত আযানের ধ্বনি সদ্যপ্রসূত শিশুর কচি মনে আজীবনের জন্য সুদূরপ্রসারী স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করবে- এটাই স্বাভাবিক। অতএব সৃষ্টির সূচনাকালের গৃহীত ‘আহ্দে আলাস্ত্ত’ বা আল্লাহর প্রতি ইবাদত ও আনুগত্যের প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতি মানব মনে জীবনব্যাপী স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যার কথা বারবার বান্দাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হয় এবং যার বিরোধিতা করা আত্মপ্রবঞ্চনা করার শামিল।


‘আহ্দে আলাস্ত্ত-র উদ্দেশ্য :


আল্লাহ বলেন,


أَنْ تَقُولُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ، أَوْ تَقُولُوْا إِنَّمَا أَشْرَكَ آبَاؤُنَا مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِّن بَعْدِهِمْ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ الْمُبْطِلُونَ، وَكَذَلِكَ نُفَصِّلُ الآيَاتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ- (الأعراف ১৭২ -১৭৪)-


বললেন, তাহ’লে তোমরা সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম’ (আলে ইমরান ৩/৮১)।


অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّراً بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ...، ‘স্মরণ কর, যখন মারিয়াম-তনয় ঈসা বলল, হে ইস্রাঈল সন্তানগণ! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল এবং আমার পূর্ববর্তী তাওরাত কিতাবের সত্যয়নকারী। আর আমি একজন রাসূলের সুসংবাদ দানকারী, যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম হবে ‘আহমাদ’... (ছফ ৬১/৬)।


উপরোক্ত আয়াত দ্বয়ে বুঝা যায় যে, বিগত সকল নবী যেমন তাঁর পূর্ববর্তী নবীর সত্যয়নকারী ছিলেন, তেমনি সকল নবী স্ব স্ব উম্মতের নিকটে শেষনবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের আগমনবার্তা শুনিয়ে গেছেন ও তাঁর প্রতি ঈমান, আনুগত্য ও তাঁকে সার্বিকভাবে সাহায্য করার জন্য অছিয়ত করে গেছেন। এদিক দিয়ে শেষনবী যে বিশ্বনবী ছিলেন এবং তাঁর আনীত শরী‘আতের মধ্যে বিগত সকল শরী‘আত যে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছে, তা পরিষ্কার হয়ে যায়।


(৪) ইহুদী পন্ডিতদের প্রতিশ্রুতি :


উপরোক্ত ওয়াদা ছাড়াও ইহুদী-নাছারা পন্ডিতদের কাছ থেকে বিশেষ প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়, যাতে তারা সত্য গোপন না করে। যেমন আল্লাহ বলেন,


وَإِذْ أَخَذَ اللّهُ مِيْثَاقَ الَّذِيْنَ أُوتُوْا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلاَ تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوْهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَناً قَلِيْلاً فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُوْنَ- (آل عمران ১৮৭)-


‘আর আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের (পন্ডিতদের) নিকট থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করলেন যে, তারা তা লোকদের নিকটে বর্ণনা করবে ও তা গোপন করবে না। তখন তারা সে প্রতিজ্ঞাকে পিছনে রেখে দিল, আর তা বেচা-কেনা করল সামান্য পয়সার বিনিময়ে। কতই না মন্দ তাদের এ বেচা-কেনা’ (আলে ইমরান ৩/১৮৭)।


(৫) সাধারণ বনু ইস্রাঈলগণের প্রতিশ্রুতি :


অতঃপর বনু ইস্রাঈলের সাধারণ লোকদের কাছ থেকেও প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়। যেমন আল্লাহ বলেন,


وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ لاَ تَعْبُدُونَ إِلاَّ اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَقُولُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيْمُوا الصَّلاَةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلاَّ قَلِيلاً مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ مُعْرِضُوْنَ- (البقرة ৮৩)-


‘যখন আমরা বনু ইস্রাঈলগণের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিলাম এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারু ইবাদত করবে না। আর তোমরা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও ইয়াতীম-মিসকীনদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং মানুষের সাথে সুন্দর কথা বলবে, ছালাত কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে। কিন্তু কিছু লোক ব্যতীত তোমরা সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলে এবং তোমরা তা অগ্রাহ্য করলে’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)।


বলা বাহুল্য যে, অধিকাংশ নবী বনু ইস্রাঈল থেকেই হয়েছেন। কিন্তু বনু ইস্রাঈলরাই অধিকাংশ নবীকে হত্যা করেছে, তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, তাদের ঐশী কিতাবসমূহকে পরিবর্তন ও বিকৃত করেছে, তাদের নবীদের চরিত্র হনন করেছে, তাদের নামে কলংক লেপন করেছে এবং অবশেষে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে চিনতে পেরেও (বাক্বারাহ ২/১৪৬; আন‘আম ৬/২০) না চেনার ভান করেছে ও তাঁর সঙ্গে চূড়ান্ত গাদ্দারী করেছে। অবশ্য তাদের মধ্যে অনেকে (قِسِّيْسِيْنَ وَرُهْبَانًا) ঈমান এনে ধন্য হয়েছিলেন এবং আল্লাহর নিকটে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছিলেন।[26] যেমন খ্যাতনামা ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম, আদী ইবনে হাতেম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এতদ্ব্যতীত হাবশার খৃষ্টান বাদশাহ নাজ্জাশী নিজে তো শেষনবীর উপরে বিশ্বাসী ছিলেন। অধিকন্তু তিনি আবিসিনিয়ার ৬২ জন ও সিরিয়ার ৮ জন মোট ৭০ জনের একটি শীর্ষস্থানীয় খৃষ্টান ধর্মীয় প্রতিনিধিদলকে মদীনায় প্রেরণ করেন। তাঁরা রাসূলের মুখে সূরা ইয়াসীন শুনে অবিরল ধারায় অশ্রু বিসর্জন দেন। অতঃপর সবাই ইসলাম গ্রহণ করেন’। তাদের প্রত্যাবর্তনের পর নাজ্জাশী নিজের ইসলাম কবুলের কথা ঘোষণা করেন এবং একখানা পত্র লিখে স্বীয় পুত্রের নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধিদল মদীনায় প্রেরণ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জাহায ডুবির কারণে তারা সবাই পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেন।[27]


আদম (আঃ)ের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব :


‘আশরাফুল মাখলূক্বাত’ বা সেরা সৃষ্টি হিসাবে আল্লাহ আদম (আঃ) ও বনু আদম (আঃ)কে সৃষ্টি করেন। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন,


وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْ آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلاً- (الإسراء ৭০)-


‘আমরা বনু আদম (আঃ)কে উচ্চ সম্মানিত করেছি, তাদেরকে স্থল ও জলপথে বহন করে নিয়েছি, তাদেরকে পবিত্র বস্ত্ত সমূহ হ’তে খাদ্য দান করেছি এবং আমাদের বহু সৃষ্টির উপরে তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করেছি’ (ইসরা ১৭/৭০)।


এখানে প্রথমে كَرَّمْنَا শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে এমন কিছু বিষয়ে একচ্ছত্র সম্মান দানের কথা বলা হয়েছে, যা অন্য কোন সৃষ্টিকে দেওয়া হয়নি। যেমন জ্ঞান-বিবেক, চিন্তাশক্তি, ভাল-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যবোধ, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা ইত্যাদি। অতঃপর فَضَّلْنَا শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে অন্যের তুলনায় মানুষকে উচ্চ মর্যাদা দানের কথা বলা হয়েছে। যেমন মানুষের উন্নত হ’তে উন্নততর জীবন যাপন প্রণালী, গৃহ নির্মাণ পদ্ধতি, খাদ্য গ্রহণ, পোষাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদিতে উন্নততর রুচিশীলতা, আইনানুগ ও সমাজবদ্ধ জীবনযাপন প্রভৃতি বিষয়গুলি অন্যান্য প্রাণী হ’তে বৈশিষ্ট্য মন্ডিত এবং নানা বৈচিত্র্যে ভরপুর। তাতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বিবর্তন ও উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। অথচ বাবুই পাখির নীড় রচনা কিংবা বনে-জঙ্গলে বাঘ-শৃগালের বসবাস পদ্ধতি লক্ষ বছর ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে। না তাতে অতীতে কোন পরিবর্তন এসেছে, না ভবিষ্যতে কোন পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।


মানুষ জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে উন্নত হ’তে উন্নততর পরিবহনে চলাফেরা ও ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। তারা পৃথিবীর সর্বোত্তম খাদ্যসমূহ গ্রহণ করছে, উন্নত পাক-প্রণালীর মাধ্যমে সুস্বাদু খাবার গ্রহণ ও সর্বোত্তম পানীয় পান করছে, যা অন্য প্রাণীর পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।


মানব মর্যাদার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিষয় হচ্ছে তাকে কথা বলার শক্তি দান করা, যা অন্য কোন সৃষ্টিকে দেওয়া হয়নি। তাকে দেওয়া হয়েছে ভাষা ও রঙের বৈচিত্র্য, দেওয়া হয়েছে লিখনক্ষমতা এবং উন্নত সাহিত্য জ্ঞান ও অলংকার সমৃদ্ধ বাক্য গঠন ও কাব্য রচনার যোগ্যতা, যা অন্য কোন সৃষ্টিকে দেওয়া হয়নি।


মানব মর্যাদার অন্যতম বিষয় হ’ল, বিশ্বের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল সৃষ্টিকে মানুষের অনুগত করে দেওয়া হয়েছে (লোকমান ৩১/২০)। যেন আল্লাহর যাবতীয় সৃষ্টিকর্মের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষ। মানুষের জন্যই যেন সবকিছু। সূর্যের কিরণ, চন্দ্রের জ্যোতি, গ্রহ-নক্ষত্রের মিটিমিটি আলো, বাতাসের মৃদুমন্দ প্রবাহ, পানির জীবনদায়িনী ক্ষমতা, মাটির উর্বরা শক্তি, আগুনের দাহিকা শক্তি, বিদ্যুতের বহু মাত্রিক কল্যাণকারিতা, মাঠভরা সবুজ শস্যভান্ডার, গাছ ভরা ফল-ফলাদি, বাগিচায় রং-বেরংয়ের ফুলের বাহার, পুকুর-নদী-সাগর ভরা নানা জাতের মাছ ও মণি-মুক্তার সমাহার, ভূগর্ভে সঞ্চিত স্বর্ণ-রৌপ্য ও খনিজ সম্পদরাজি ও তৈল-গ্যাসের আকর, গোয়াল ও জঙ্গলভরা পশু-পক্ষীর আবাস কাদের জন্য? এক কথায় জবাব: এসবই কেবল মানুষের জন্য। আল্লাহ বলেন, هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الأَرْضِ جَمِيعاً ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/২৯)।


প্রশ্ন হ’ল: সবই যখন মানুষের জন্য, তাহ’লে মানুষ কার জন্য? তারও জবাব একটাই: ‘আমরা আল্লাহর জন্য, এবং আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব’ (বাক্বারাহ ২/১৫৬)। ‘আমরা এসেছি তাঁর ইবাদতের জন্য, সর্বক্ষেত্রে তাঁর দাসত্বের জন্য (যারিয়াত ৫১/৫৬) এবং দুনিয়ায় তাঁর খেলাফত পরিচালনার জন্য’ (বাক্বারাহ ২/৩০)।। বিশ্বলোকে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর ইবাদতে রত। সবই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (লোকমান ৩১/২৯) নির্দিষ্ট নিয়মের অধীনে পরিচালিত (ফাতির ৩৫/৪৩)। সবই আল্লাহর অনুগত ও তাঁর প্রতি সিজদায় অবনত এবং কেবল তাঁরই গুণগানে রত। জগত সংসার পরিচালনার এই সুনির্দিষ্ট নিয়মটাই হ’ল ‘দ্বীন’ এবং এই দ্বীনের প্রতি নিখাদ আনুগত্য ও আত্মসমর্পণকেই বলা হয় ‘ইসলাম’। এজন্যেই বলা হয়েছে إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ ‘আল্লাহর নিকটে ‘দ্বীন’ হ’ল কেবল ‘ইসলাম’ (আলে ইমরান ৩/১৯)।


ইসলামের দু’টি দিক রয়েছে, প্রাকৃতিক ও মানবিক। প্রথমটি সমস্ত বিশ্ব প্রকৃতিতে পরিব্যপ্ত। যেখানে সবকিছু সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক প্রাকৃতিক নিয়মে পরিচালিত। যে নিয়মের কোন ব্যত্যয় নেই কোন ব্যতিক্রম নেই (আল্লাহর বিশেষ হুকুম ব্যতীত) (ইউসুফ ১২/৪০; আহযাব ৩৩/৬২; ইসরা ১৭/৭৭)।


দ্বিতীয়টি অর্থাৎ মানবিক জীবন পরিচালনার ব্যবহারিক নীতি-নিয়ম যা আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসূলদের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। একেই বলে ইসলামী শরী‘আত। যা আদম (আঃ) আলাইহিস সালামের মাধ্যমে শুরু হয়ে শেষনবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে শেষ হয়েছে ও পূর্ণতা লাভ করেছে (মায়েদাহ ৫/৩)। উল্লেখ্য যে, আভিধানিক অর্থে বিগত সকল নবীর দ্বীনকে ইসলাম বলা গেলেও পারিভাষিকভাবে শেষনবীর নিকটে প্রেরিত সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ দ্বীনকেই কেবল ‘ইসলাম’ বলা হয়ে থাকে। আল্লাহ বলেন,


فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيفًا فِطْرَةَ اللهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ- (الروم ৩০)-


‘তুমি তোমার চেহারাকে দ্বীনের জন্য একনিষ্ঠ কর। এটিই আল্লাহর ফিৎরাত, যার উপরে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই হ’ল সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না’ (রূম ৩০/৩০)।

তাদের মধ্যে মুমিন, কাফির, ফাসিক সবই রয়েছে। জিনেরা যে এলাকায় বাস করে সে এলাকার মানুষের ভাষা তারা বুঝে। নবুঅতের দশম বছরে ত্বায়েফ থেকে ফেরার পথে ‘নাখলা’ উপত্যকায় জিনেরা রাসূলের কণ্ঠে সূরা রহমান শুনেছিল ও যতবারই আল্লাহ فَبِأَىِّ آلاَءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ বলেছেন, ততবারই তারা জবাবে বলেছিল, লা বেশাইয়িন মিন নি‘আমিকা রববানা নুকাযযিবু ফালাকাল হাম্দ।[30] তারা মানুষের কথা শোনে, বুঝে ও উপলব্ধি করে। আল্লাহর কিতাব জিন ও ইনসান সবার জন্য। অতএব তাদের পরিণতি ও মানুষের পরিণতি একই।


বস্ত্ততঃ আদম (আঃ) ও বনু আদম হ’ল আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় ও সেরা সৃষ্টি। মৃত্যুকাল অবধি তাকে এ দুনিয়ার পরীক্ষাগারে অবস্থান করতে হবে একজন সজাগ ও সক্রিয় পরীক্ষার্থী হিসাবে। মৃত্যুর পরেই তার ক্বিয়ামত শুরু হয়ে যাবে। ভাল-মন্দ কর্মের সুযোগ আর থাকবে না। তাই আল্লাহ প্রেরিত অহীর বিধান মেনে চলে কল্যাণময় জীবন পরিচালনার মাধ্যমে আল্লাহর সেরা সৃষ্টির মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় হওয়াই বুদ্ধিমান মানুষের কর্তব্য।


মনে রাখতে হবে যে, ‘আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁর দিকেই ফিরে যাব’ (বাক্বারাহ ২/১৫৬)। ‘আমাদের ছালাত, আমাদের কুরবানী, আমাদের জীবন, আমাদের মরণ সবকিছুই কেবলমাত্র বিশ্বপ্রভু আল্লাহর জন্য’ (আন‘আম ৬/১৬৩)। জান্নাত থেকে নিক্ষিপ্ত বনু আদম (আঃ) আমরা যেন পুনরায় জান্নাতে ফিরে যেতে পারি, করুণাময় আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দান করুন- আমীন!!


দুনিয়াবী ব্যবস্থাপনায় আদম (আঃ) :


হাফেয শামসুদ্দীন যাহাবী (রহঃ) الطب النبوى কেতাবে বলেন, মানুষের দুনিয়াবী জীবনে প্রয়োজনীয় সর্বপ্রকার শিল্পকর্ম অহীর মাধ্যমে কোন না কোন নবীর হাতে শুরু হয়েছে। অতঃপর যুগে যুগে তার উন্নতি ও উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। সর্বপ্রথম আদম (আঃ) (আঃ)-এর উপরে যে সব অহী নাযিল করা হয়েছিল, তার অধিকাংশ ছিল ভূমি আবাদ করা, কৃষিকার্য ও শিল্প সংক্রান্ত। যাতায়াত ও পরিবহনের জন্য চাকা চালিত গাড়ী সর্বপ্রথম আদম (আঃ) (আঃ) আবিষ্কার করেন। কালের বিবর্তনে নানাবিধ মডেলের গাড়ী এখন চালু হয়েছে। কিন্তু সব গাড়ীর ভিত্তি হ’ল চাকার উপরে। বলা চলে যে, সভ্যতা এগিয়ে চলেছে চাকার উপরে ভিত্তি করে। অতএব যিনি প্রথম এটা চালু করেন, তিনিই বড় আবিষ্কারক। আর তিনি ছিলেন আমাদের আদি পিতা প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হযরত আদম (আঃ) (আলাইহিস সালাম)। যা তিনি অহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়েছিলেন।[31] আদম (আঃ)ের যুগে পৃথিবীর প্রথম কৃষিপণ্য ছিল ‘তীন’ ফল। ফিলিস্তীন ভূখন্ড থেকে সম্প্রতি প্রাপ্ত সে যুগের একটি আস্ত তীন ফলের শুষ্ক ফসিল পরীক্ষা করে একথা প্রমাণিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ‘তীন’ ফলের শপথ করেছেন। আল্লাহ আমাদের আদি পিতার উপরে শান্তি বর্ষণ করুন- আমীন!


আদম (আঃ) পুত্রদ্বয়ের কাহিনী :


আল্লাহ বলেন,وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ. ‘আপনি ওদেরকে (আহলে কিতাবদেরকে) আদম (আঃ) পুত্রদ্বয়ের যথার্থ কাহিনী শুনিয়ে দিন। যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজনের কুরবানী কবুল হ’ল। কিন্তু অপরজনের কুরবানী কবুল হ’ল না। তখন একজন বলল, আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। জবাবে অপরজন বলল, আল্লাহ কেবলমাত্র আল্লাহভীরুদের থেকেই কবুল করেন’ (মায়েদাহ ২৭)। ‘যদি তুমি আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াও, আমি তোমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াবো না। আমি বিশ্বপ্রভু আল্লাহকে ভয় করি’ (২৮)। ‘আমি মনে করি এর ফলে তুমি আমাকে হত্যার পাপ ও তোমার অন্যান্য পাপসমূহের বোঝা নিয়ে জাহান্নামবাসী হবে। আর সেটাই হ’ল অত্যাচারীদের কর্মফল’ (২৯)। ‘অতঃপর তার মন তাকে ভ্রাতৃহত্যায় প্ররোচিত করল এবং সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হ’ল’ (৩০)। ‘অতঃপর আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন। যে মাটি খনন করতে লাগল এটা দেখানোর জন্য যে কিভাবে সে তার ভাইয়ের মৃতদেহ দাফন করবে। সে বলল, হায়! আমি কি এই কাকটির মতোও হ’তে পারলাম না, যাতে আমি আমার ভাইয়ের মৃতদেহ দাফন করতে পারি। অতঃপর সে অনুতপ্ত হ’ল’ (মায়েদাহ ৫/২৭-৩১)।


কুরআনের উক্ত বর্ণনা ছাড়াও ‘জাইয়িদ’ (উত্তম) সনদ সহ আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ও আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে ‘মওকূফ’ সূত্রে যা যা বর্ণিত হয়েছে এবং হাফেয ইবনু কাছীর যাকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী একাধিক বিদ্বানগণের ‘মশহূর’ বক্তব্য বলে স্বীয় তাফসীরে ও তারীখে উল্লেখ করেছেন, সে অনুযায়ী আদম (আঃ) পুত্রদ্বয়ের নাম ছিল ক্বাবীল ও হাবীল (قابيل وهابيل ) এবং ক্বাবীল ছিল আদম (আঃ)ের প্রথম সন্তান ও সবার বড় এবং হাবীল ছিল তার ছোট।


হত্যাকান্ডের কারণ :


এ বিষয়ে কুরআন যা বলেছে তা এই যে, দু’ভাই আল্লাহর নামে কুরবানী করেছিল। কিন্তু আল্লাহ একজনের কুরবানী কবুল করেন, অন্যজনেরটা করেননি। তাতে ক্ষেপে গিয়ে একজন অন্যজনকে হত্যা করে, যার কুরবানী কবুল হয়েছিল।


ও আক্রোশ মন্দ লোকদের মজ্জাগত স্বভাব। যা পৃথিবীতে সর্ব যুগে বিদ্যমান রয়েছে। এর ফলে ভালো লোকেরা সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হ’লেও চূড়ান্ত বিচারে তারাই লাভবান হয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে মন্দ লোকেরা সাময়িকভাবে লাভবান হ’লেও চূড়ান্ত বিচারে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। নির্দোষ হাবীলকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে ক্বাবীল তার আক্রোশ মিটিয়ে সাময়িকভাবে তৃপ্তিবোধ করলেও চূড়ান্ত বিচারে সে অনন্ত ক্ষতির মধ্যে পতিত হয়েছে। সেদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন, فَأَصْبَحَ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ- ‘অতঃপর সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হ’ল’ (মায়েদাহ ৫/৩০)।


রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَ تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا إلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الأوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا لِأَنَّهُ أَوَّلُ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ، رواه البخاريُّ- ‘অন্যায়ভাবে কোন মানুষ নিহত হ’লে তাকে খুন করার পাপের একটা অংশ আদম (আঃ)ের প্রথম পুত্রের আমলনামায় যুক্ত হয়। কেননা সেই-ই প্রথম হত্যাকান্ডের সূচনা করে’।[36] তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তির উপর তার ভাইয়ের সম্মানহানি বা অন্য কোন প্রকারের যুলুম রয়েছে, সে যেন তার থেকে আজই তা মুক্ত করে নেয়, সেইদিন আসার আগে, যেদিন তার নিকটে দীনার ও দিরহাম (স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা) কিছুই থাকবে না (অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে)। যদি তার নিকট কোন সৎকর্ম থাকে, তবে তার যুলুম পরিমাণ নেকী সেখান থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি তার কোন নেকী না থাকে, তাহ’লে মযলূমের পাপ সমূহ নিয়ে যালেমের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে’।[37]


উক্ত মর্মে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে وَلَيَحْمِلُنَّ اَتْْقَاَلَهُمْ وَأَثْقَاَلاً مَّعَ أَثْقَالِهِمْ وَلَيُسْئَلُنَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَمَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ- ‘আর তারা অবশ্যই নিজেদের পাপভার বহন করবে ও তার সাথে অন্যদের পাপভার এবং তারা যেসব মিথ্যারোপ করে, সে সম্পর্কে ক্বিয়ামতের দিন অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে’ (আনকাবূত ২৯/১৩)।


শিক্ষণীয় বিষয় :


(১) ক্বাবীল ও হাবীলের উক্ত কাহিনীর মধ্যে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির তাড়নায় প্ররোচিত হওয়ার ও তার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন হওয়ার প্রমাণ নিহিত রয়েছে।

(২) অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা যে সর্বাপেক্ষা জঘন্য পাপ এবং তওবা ব্যতীত হত্যাকারীর কোন নেক আমল আল্লাহ কবুল করেন না, তার প্রমাণ রয়েছে।

(৩) আল্লাহভীরু ব্যক্তিগণ অন্যায়ের পাল্টা অন্যায় করেন না, বরং আল্লাহর উপরে ভরসা করেন ও তাঁর নিকটেই তার বদ্লা কামনা করেন।

(৪) অন্যায়ের ফলে অন্যায়কারী এক সময় অনুতপ্ত হয় ও দুনিয়াতে সে অন্তর্জ্বালায় দগ্ধীভূত হয় এবং আখেরাতে জাহান্নামের খোরাক হয়।

(৫) নেককার ব্যক্তিগণ দুনিয়ার দুঃখ-কষ্টকে আল্লাহর পরীক্ষা মনে করেন এবং এতে ধৈর্য ধারণ করেন।

(৬) মযলূম যদি ধৈর্য ধারণ করে, তবে তার গোনাহ সমূহ যালেমের ঘাড়ে চাপে এবং দুই জনের পাপের শাস্তি যালেমকে একাই ভোগ করতে হয়।

(৭) মানুষ মারা গেলে কবর দেওয়াই আল্লাহ প্রদত্ত চিরন্তন বিধান। ইসলামী শরী‘আতে এই বিধান রয়েছে (আবাসা ৮০/২১)। অতএব মৃত মানুষকে পুড়িয়ে ভস্ম করা উক্ত আবহমান কালব্যাপী এলাহী সুন্নাতের স্পষ্ট লংঘন।

(৮) অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যার এই সিলসিলা ক্বাবীলের মাধ্যমে শুর হয় বিধায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ অন্যায়ভাবে খুন হবে, সকল হত্যাকারীর পাপের বোঝা ক্বাবীলের আমলনামায় চাপানো হবে। অতএব অন্যায়ের সূচনাকারীগণ সাবধান!


মৃত্যু ও বয়স :


রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম দিন হ’ল জুম‘আর দিন। এ দিনেই আদম (আঃ)কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনেই তার মৃত্যু হয়েছে এবং এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে...’।[38] আদম (আঃ) (আঃ)-কে এক হাযার বছর বয়স দেওয়া হয়েছিল। রূহের জগতে দাঊদ (আঃ)-এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি নিজের বয়স থেকে ৪০ বছর তাকে দান করেন। ফলে অবশিষ্ট ৯৬০ বছর তিনি জীবিত ছিলেন।[39]


আদম (আঃ)-এর জীবনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ :


১. তিনি সরাসরি আল্লাহর দু’হাতে গড়া এবং মাটি হ’তে সৃষ্ট। তিনি জ্ঞানসম্পন্ন ও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে জীবন লাভ করেছিলেন।

২. তিনি ছিলেন মানব জাতির আদি পিতা ও প্রথম নবী।

৩. তিনি জিন জাতির পরবর্তী প্রতিনিধি হিসাবে এবং দুনিয়া পরিচালনার দায়িত্বশীল খলিফা হিসাবে প্রেরিত হয়েছিলেন।

৪. দুনিয়ার সকল সৃষ্ট বস্ত্তর নাম অর্থাৎ সেসবের জ্ঞান ও তা ব্যবহারের যোগ্যতা তাকে দান করা হয়েছিল।

৫. জিন ও ফিরিশতা সহ সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সৃষ্টির উপরে মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত। সকলে তাদের অনুগত ও তাদের সেবায় নিয়োজিত।

৬. আদম (আঃ)কে জান্নাতে সৃষ্টি করা হয়। যা পৃথিবীর বাইরে আসমানে সৃষ্ট অবস্থায় তখনও ছিল, এখনও আছে।

৭. জান্নাতে আদম (আঃ)এর পাঁজরের হাড় থেকে তার জোড়া হিসাবে স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়। সেকারণ স্ত্রী জাতি সর্বদা পুরুষ জাতির অনুগামী এবং উভয়ে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট।

৮. আদম (আঃ) ও হাওয়াকে আসমানী জান্নাত থেকে দুনিয়ায় নামিয়ে দেওয়া হয় এবং পৃথিবীর নাভিস্থল মক্কার সন্নিকটে না‘মান উপত্যকায় অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে ক্বিয়ামত পর্যন্ত জন্মগ্রহণকারী সকল মানুষের ক্ষুদ্রদেহী অবয়ব সৃষ্টি করে তাদের নিকট থেকে ‘আহদে আলাস্ত্ত’ অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি দাসত্বের স্বীকৃতি ও প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়।


৯. মানুষ হ’ল পৃথিবীর একমাত্র জ্ঞান সম্পন্ন প্রাণী। তাকে ভাল ও মন্দ দু’টিই করার ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।


১০. আদম (আঃ)এর মধ্যে মানবত্ব ও নবুওয়াতের নিষ্পাপত্ব উভয় গুণ ছিল। তিনি শয়তানের প্ররোচনায় আল্লাহর নিষেধাজ্ঞার কথা সাময়িকভাবে ভুলে গিয়ে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেয়ে অনুতপ্ত হন ও তওবা করেন। তওবা কবুল হবার পরে তিনি নবুঅত প্রাপ্ত হন। অতএব নিঃসন্দেহে তিনি নিষ্পাপ ছিলেন। একইভাবে আদম (আঃ)ের আওলাদগণ পাপ করে তওবা করলে আল্লাহ তা মাফ করে থাকেন।


১১. আদম (আঃ)কে সিজদা না করার পিছনে ইবলীসের অহংকার ও তার পরিণতিতে তার অভিশপ্ত হওয়ার ঘটনার মধ্যে মানুষকে অহংকারী না হওয়ার শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।


১২. জৈবিক ও আধ্যাত্মিক দিকের সমন্বয়ে মানুষ একটি অসাধারণ সত্তা, যা অন্য কোন সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নয়।


১৩. ঈমানদার বান্দাগণ ক্বিয়ামতের দিন বিচার শেষে পুনরায় জান্নাতে ফিরে যাবে।


১৪. দুনিয়াবী ব্যবস্থাপনার সকল জ্ঞান আদম (আঃ)কে দেওয়া হয়েছিল এবং তার মাধ্যমেই পৃথিবীতে প্রথম ভূমি আবাদ ও চাকা চালিত পরিবহনের সূচনা হয়।


১৫. সবকিছুই সৃষ্টি হয়েছে মানুষের সেবার জন্য। আর মানুষ সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর দাসত্বের জন্য।


[1]. মুমিনূন ২৩/১২; ছাফফাত ৩৭/১১; রহমান ৫৫/১৪; তীন ৯৫/৪ ইত্যাদি।

[2]. নিসা ৪/১; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩২৩৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায় ‘নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার’ অনুচ্ছেদ। আদম (আঃ) এর মূল উপাদান হ’ল মাটি, তাই তাকে ‘আদম (আঃ)’ বলা হয়। পক্ষান্তরে হাওয়ার মূল হ’লেন আদম (আঃ), যিনি তখন জীবন্ত ব্যক্তি। তাই তাকে ‘হাওয়া’ বলা হয়, যা ‘হাই’ (জীবন্ত) থেকে উৎপন্ন (কুরতুবী), বাক্বারাহ ৩৫; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/৬২ পৃঃ।

[3]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (বৈরুত:দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি) ১/৬৭।

[4]. আহমাদ, ত্বাবারাণী, মিশকাত হা/৫৭৩৭ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায় ‘সৃষ্টির সূচনা ও নবীগণের আলোচনা’ অনুচ্ছেদ।

[5]. তিরমিযী, আহমাদ, আবুদাঊদ মিশকাত হা/২১২ ‘ইল্ম’ অধ্যায়।

[6]. আহমাদ, মিশকাত হা/৪২ ‘ঈমান’ অধ্যায়।

[7]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫১৬ ‘ফিতান’ অধ্যায়।

[8]. যথাক্রমে সূরা বাক্বারাহ ২/৩১-৩৭= ৭; আলে ইমরান ৩/৩৩,৫৯; মায়েদাহ ৫/২৭-৩২= ৬; আ‘রাফ ৭/১১, ১৯, ২৬, ২৭, ৩১, ৩৫, ১৭২-৭৩= ৮; হিজর ১৫/২৬-৪২= ১৭; ইসরা ১৭/৬১, ৭০; ইয়াসীন ৩৬/৬০। সর্বমোট = ৫০টি।

[9]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/৬৫।

[10]. বুখারী হা/৪৭২৭ ‘তাফসীর’ অধ্যায়, সূরা কাহফ।

[11]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮ ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘ওয়াসওয়াসা’ অনুচ্ছেদ।

[12]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/৬৬।

[13]. নিসা ৪/১; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩২৩৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায় ১০ম অনুচ্ছেদ।

[14]. তাফসীর ইবনে জারীর (বৈরুত: ১৪০৬/১৯৮৬) ৮/১০৯ পৃঃ, সূরা আ‘রাফ ৭/ ২২।

[15]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৩৩-৪৩৪ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায় ‘গোসল’ অনুচ্ছেদ।

[16]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮২ ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।

[17]. আহমাদ, মিশকাত হা/১২১ ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।

[18]. আয়াতটি হ’লঃ وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِن بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُوْرِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُواْ بَلَى شَهِدْنَا أَن تَقُولُواْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِيْنَ. ‘আর যখন তোমার পালনকর্তা বনু আদম (আঃ)ের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তানদের বের করে আনলেন এবং নিজের উপর তাদের প্রতিজ্ঞা করালেন ‘আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই’? তারা বলল, অবশ্যই। ‘আমরা এ বিষয়ে অঙ্গীকার করছি’ আর এটা এজন্য, যাতে তোমরা ক্বিয়ামতের দিন একথা বলতে না পারো যে, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না’ (আ‘রাফ ৭/১১২)।

[19]. মালেক, আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৯৫ ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।

[20]. আহমাদ, মিশকাত হা/১১৯ ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।

[21]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯০ ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।

[22]. যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, على فطرة الاسلام ‘ইসলামের উপর’ ছহীহ ইবনু হিববান হা/১৩২; শু‘আয়েব আরনাঊত্ব বলেন, রাবীগণ সকলে বিশ্বস্ত।

[23]. মুসলিম হা/২৮৬৫ ‘জান্নাতের বিবরণ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ১৬; আহমাদ হা/১৬৮৩৭

[24]. আলবানী, ছহীহ তিরমিযী হা/১২২৪; মিশকাত হা/৪১৫৭ ‘আক্বীক্বা’ অনুচ্ছেদ।

[25]. আহমাদ, মওকূফ ছহীহ, মারফূ হুকমী, মিশকাত হা/১২২ ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।

[26]. মায়েদাহ ৫/৮২; ক্বাছাছ ২৮/৫২-৫৪; ঐ, তাফসীর ত্বাবারী ২০/৫৬ পৃ: ; তাফসীর ইবনু কাছীর; ত্বাবারী ৩২+৮=৪০ জন এবং ইবনু কাছীর ৭০ জন বলেছেন।

[27]. মুফতী মুহাম্মাদ শফী, তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন (বঙ্গানুবাদ সংক্ষেপায়িত : মদীনা ত্বাইয়েবা ১৪১৩/১৯৯৩), পৃঃ ৩৪০।

[28]. বাক্বারাহ ২/৩০; আন‘আম ৬/১৬৫; ফাত্বির ৩৫/৩৯।

[29]. মুসলিম, হা/১৯২০ ‘নেতৃত্ব’ অধ্যায়।

[30]. তিরমিযী হা/৩৫২২ ‘তাফসীর’ অধ্যায় সূরা রহমান; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১৫০।

[31]. তাসফীর মা‘আরেফুল কুরআন পৃঃ ৬২৯।

[32]. তাফসীর ইবনু কাছীর, মায়েদাহ ২৭-৩১ আয়াত; গৃহীত। তাফসীর ইবনু জারীর, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে, সনদ জাইয়িদ।

[33]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি) ১/৮৭ পৃঃ।

[34]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/৮৭ পৃঃ।

[35]. আবুদাঊদ হা/৪২৫৭, ৫৯৬২ ‘ফিতান’ অধ্যায়; তিরমিযী হা/২২০৪, ইবনু মাজাহ হা/৩৯৬১ সনদ ছহীহ।

[36]. বুখারী হা/৩৩৩৫; মুসলিম, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/২১১ ‘ইল্ম’ অধ্যায়।

[37]. বুখারী হা/২৪৪৯; মিশকাত হা/৫১২৬ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায় ‘যুলুম’ অনুচ্ছেদ ২১।

[38]. মুওয়াত্ত্বা, আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/১৩৫৯; সনদ ছহীহ, ‘ছালাত’ অধ্যায় ‘জুম‘আ’ অনুচ্ছেদ।

[39]. তিরমিযী, মিশকাত হা/১১৮ ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ; সনদ ছহীহ, তিরমিযী হা/৩০৭৬ ‘তাফসীর সূরা আ‘রাফ’। একই হাদীছ মিশকাত হা/৪৬৬২ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায় ‘সালাম’ অনুচ্ছেদে এসেছে। যেখানে ‘আদম (আঃ) তার বয়স থেকে ৬০ বছর দান করেন’ বলা হয়েছে। তিরমিযী হাদীছটিকে ‘হাসান গরীব’ বলেছেন ছাহেবে মিরক্বাত ও ছাহেবে তোহফা উভয়ে বলেন যে, ‘৪০ বছর দান করার হাদীছ অগ্রগণ্য (الأرجح)। দ্রঃ তুহফাতুল আহওয়াযী হা/৫০৭২-এর ব্যাখ্যা।

Post a Comment

Previous Post Next Post